ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বাস্তব কাজে কেন বেশি দক্ষ হন: বিশ্লেষণ



ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বাস্তব কাজে কেন বেশি দক্ষ হন: বিশ্লেষণ

১. কারিগরি শিক্ষার ধরণ ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ:

  • ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কারিকুলাম মূলত ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
  • তারা প্রতিটি বিষয়ে ল্যাব ওয়ার্ক, প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং (ইন্টার্নশিপ) করে বাস্তব সমস্যার সমাধান শিখে।
  • হাতে-কলমে কাজ শেখানো হয়, ফলে সমস্যা সমাধানে দ্রুত দক্ষতা অর্জন করে।

২. শুরু থেকেই বাস্তবমুখী চর্চা:

  • ডিপ্লোমা কোর্সে (বিশেষ করে বাংলাদেশে) প্রথম সেমিস্টার থেকেই মেশিন, টুলস, সার্কিট, সফটওয়্যার ব্যবহার শেখানো হয়।
  • শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট প্রকল্প (Project Work) বানিয়ে বাস্তব কাজের সাথে জড়িত থাকে।
  • যেমন: ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সার্কিট ডিজাইন বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ল্যাথ মেশিনের ব্যবহার।

৩. ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট ও ইন্টার্নশিপ:

  • ডিপ্লোমা কোর্সে সাধারণত ৩ মাস বা তার বেশি সময়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং বাধ্যতামূলক।
  • সরাসরি শিল্পকারখানায় কাজ করে হাতে-কলমে শেখার ফলে বাস্তব দক্ষতা বেড়ে যায়।
  • বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা অনেক সময় শুধু থিওরি পড়েই ডিগ্রি অর্জন করে; তাদের হাতে-কলমে কাজের সুযোগ কম থাকে যদি আলাদা করে ট্রেনিং না করে।

৪. নিম্ন স্তরের কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা:

  • ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা প্রথম দিকে ছোট ছোট প্রকল্পে, সাইটে বা প্রোডাকশন লেভেলে সরাসরি কাজ করেন।
  • ফলে মেশিন মেরামত, সেটআপ, সমস্যা শনাক্তকরণ ইত্যাদি কাজে তারা অনায়াস দক্ষতা অর্জন করেন।
  • তারা জানেন, বাস্তবে কাগজের প্ল্যানের সাথে কাজের বাস্তবতা কতটা ভিন্ন হতে পারে।

৫. সহজ যোগাযোগ দক্ষতা ও কর্মক্ষেত্রের বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী কাজ:

  • ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা মজুরীভিত্তিক বা নিম্নমধ্যম স্তরের টিম মেম্বারদের সাথে সরাসরি কাজ করে।
  • কাজের সময় মিস্ত্রি, টেকনিশিয়ান ও শ্রমিকদের ভাষায় কথা বলার ও সমন্বয় করার অভিজ্ঞতা হয়।
  • বাস্তবে কাজ করাতে, কাজ বুঝাতে এবং সমাধান খুঁজতে এ দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. শুরুতেই বাস্তব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া:

  • ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ক্যারিয়ারের শুরুতে ফিল্ড ওয়ার্ক, সাইট সুপারভিশন, মেইনটেন্যান্স ইত্যাদিতে নিয়োজিত হয়।
  • এর ফলে তারা সমস্যা দ্রুত ধরতে ও সমাধান করতে শিখে, যা অফিস রুমের পরিকল্পনার চেয়ে বাস্তবভিত্তিক।

৭. মোটিভেশন ও ক্যারিয়ার চ্যালেঞ্জ:

  • অনেক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার জানেন, তাদের সামাজিক ও পেশাগত অবস্থান উন্নত করতে বাস্তব দক্ষতা ছাড়া উপায় নেই।
  • তাই তারা নিজেরাই বেশি পরিশ্রম করে শিখে নেন, হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।






সংক্ষেপে বলা যায়:

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ছোটবেলা থেকেই বাস্তব কাজের সাথে যুক্ত থেকে, নিয়মিত প্র্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাস্তব দক্ষতায় অনেক এগিয়ে থাকেন। তবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদেরও যদি একইভাবে বাস্তব কাজের সাথে যুক্ত করা হয়, তারা গবেষণা ও নেতৃত্বের দিক থেকে এগিয়ে যেতে পারেন।