একটি বিল্ডিংয়ের বৈদ্যুতিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হয়

বিল্ডিংয়ের ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন (Electrical Design) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কারণ এর সাথে ভবনের সুরক্ষা, কার্যকারিতা, স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারকারীর আরাম সরাসরি জড়িত। একটি সঠিক বৈদ্যুতিক নকশা না হলে অগ্নিকাণ্ড, শর্ট সার্কিট, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ বা যন্ত্রপাতির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নিচে একটি বিল্ডিংয়ের বৈদ্যুতিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হয় তা বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:


 


১. লোড ক্যালকুলেশন (Load Calculation)

  • ভবনের প্রতিটি ফ্লোর/রুমের জন্য কত ওয়াট/কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে তা হিসাব করা।
  • আলোকসজ্জা (Lighting), ফ্যান, এসি, লিফট, পাম্প, যন্ত্রপাতি, সকেট ইত্যাদির জন্য আলাদা লোড নির্ধারণ।
  • ডিমান্ড ফ্যাক্টর ও ডাইভারসিটি ফ্যাক্টর বিবেচনায় রেখে মোট সংযোগ লোড (Connected Load) নির্ধারণ।

২. পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (Power Distribution System)

  • প্রধান LT Panel / MDB (Main Distribution Board) এর ধারণক্ষমতা।
  • সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড (SDB), ফ্লোর DB, সার্কিট ব্রেকার, MCB, MCCB, ELCB, RCCB এর ক্ষমতা ও অবস্থান নির্ধারণ।
  • লো-ভোল্টেজ (LV), মিডিয়াম ভোল্টেজ (MV), এবং কখনো হাই-ভোল্টেজ (HV) পাওয়ার লাইন সংযোগের প্রয়োজন হলে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা।

৩. ওয়্যারিং সিস্টেম (Wiring System)

  • তারের সঠিক সাইজ (Cable Sizing) এবং টাইপ (PVC, XLPE, Armored ইত্যাদি)।
  • ভোল্টেজ ড্রপ (Voltage Drop) এবং শর্ট সার্কিট কারেন্ট বিবেচনা।
  • কন্ডুইট (Conduit), ট্রাঙ্কিং, কেবল ট্রে ও ডাক্ট সঠিকভাবে বসানো।
  • ভবিষ্যতে নতুন লোড যুক্ত করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা।

৪. আলোকসজ্জা (Lighting Design)

  • প্রাকৃতিক আলো ও কৃত্রিম আলোর সমন্বয়।
  • প্রতিটি কক্ষে কত Lux মাত্রা প্রয়োজন তা হিসাব (যেমন অফিসে 300-500 Lux, বাসায় 150-300 Lux)।
  • LED লাইট, সেন্সর বেইসড লাইট, ইমার্জেন্সি লাইটিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা।

৫. সেফটি অ্যান্ড প্রোটেকশন (Safety & Protection)

  • শর্ট সার্কিট, ওভারলোড, আর্থ ফল্ট সুরক্ষার ব্যবস্থা।
  • Earthing / Grounding System (Pipe, Plate, Chemical Earthing) যথাযথভাবে স্থাপন।
  • সার্জ প্রটেকশন ডিভাইস (SPD), লাইটনিং অ্যারেস্টর, ফায়ার অ্যালার্ম ও স্মোক ডিটেক্টর ব্যবস্থা।
  • ইমার্জেন্সি পাওয়ার ব্যাকআপ (Generator, IPS, UPS)।

৬. স্পেশাল সিস্টেম (Special Systems)

  • লিফট (Lift) ও এসকেলেটর সাপোর্ট।
  • পাম্পিং মেশিন, পানির ট্যাংক ও Borewell মোটর সংযোগ।
  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা: CCTV, Access Control, PA System।
  • ডাটা নেটওয়ার্কিং, টেলিফোন, ইন্টারনেট, টিভি লাইন ইত্যাদি Low Voltage System।

৭. এনার্জি ইফিসিয়েন্সি (Energy Efficiency)

  • এনার্জি সেভিং যন্ত্রপাতি ও লাইট ব্যবহার।
  • সোলার সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন (Net Metering) এর ব্যবস্থা রাখা।
  • স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল সিস্টেম (Building Management System - BMS, Smart Switches)।

৮. ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল কোড ও স্ট্যান্ডার্ড (Codes & Standards)

  • বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (BNBC)।
  • IEC, NEC, IEEE স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নকশা।
  • স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের (DESCO, DPDC, REB ইত্যাদি) গাইডলাইন অনুসরণ।

৯. ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ (Future Expansion)

  • তার ও সার্কিটে ২০-২৫% অতিরিক্ত ক্ষমতা রাখা।
  • ভবিষ্যতে নতুন মেশিন/AC/সোলার সংযোগের জন্য পর্যাপ্ত স্থান ও লোড ক্যাপাসিটি রাখা।