Micro Teaching নতুন এক শিক্ষণ কৌশল
Micro Teaching হলো শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি আধুনিক পদ্ধতি। এখানে শিক্ষক প্রার্থী বা নতুন শিক্ষকরা ছোট আকারে (micro level) একটি নির্দিষ্ট পাঠ বা বিষয় সীমিত সময়ে (৫–১০ মিনিটের মধ্যে) অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর (৫–১০ জন) সামনে উপস্থাপন করেন। পরে সেই উপস্থাপন বিশ্লেষণ, সমালোচনা ও পুনরায় সংশোধন করা হয়।
এটি প্রথম চালু হয় ১৯৬৩ সালে আমেরিকার Stanford University-তে। বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণে এটি বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত ও কার্যকর কৌশল।
✅ Micro Teaching এর বৈশিষ্ট্য
- ক্ষুদ্র পরিসরে শিক্ষা কার্যক্রম (সময় ও শিক্ষার্থী সীমিত)।
- একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা অনুশীলন করা হয় (যেমন- প্রশ্ন করার কৌশল, ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার, ভিজ্যুয়াল এইড ব্যবহার ইত্যাদি)।
- Feedback পাওয়া যায় (অন্য শিক্ষক/ট্রেইনার বা সহপাঠী থেকে)।
- পুনরায় সংশোধন ও উপস্থাপনার সুযোগ থাকে।
- এটি “Teach – Re-teach – Feedback” মডেল অনুসরণ করে।
🌟 Micro Teaching এর সুবিধা
- নিরাপদ পরিবেশ – শিক্ষার্থী কম থাকায় শিক্ষক প্রার্থী ভয়মুক্ত হয়ে অনুশীলন করতে পারে।
- দক্ষতা উন্নয়ন – শিক্ষকতার নির্দিষ্ট কৌশল আলাদা করে শেখার সুযোগ থাকে।
- তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া – ভুলত্রুটি সঙ্গে সঙ্গে জানা যায় ও সংশোধন করা যায়।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি – নতুন শিক্ষকরা বাস্তব ক্লাস নেওয়ার আগে আত্মবিশ্বাস অর্জন করে।
- সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা – নিজের ও অন্যদের পাঠ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।
- বারবার অনুশীলন সুযোগ – একই পাঠ কয়েকবার উন্নতভাবে নেওয়া যায়।
- প্রযুক্তি ব্যবহার – ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে নিজের পারফরম্যান্স দেখা যায়।
⚠️ Micro Teaching এর অসুবিধা
- বাস্তব পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে না – অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ও স্বল্প সময়ে আসল শ্রেণীকক্ষের পরিবেশ তৈরি হয় না।
- সময় সাপেক্ষ – একেকজনকে আলাদাভাবে অনুশীলন, Feedback ও পুনরায় শিক্ষাদান করানো অনেক সময় নেয়।
- কৃত্রিম পরিবেশ – শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শ্রেণির মতো আচরণ করে না।
- সব ধরনের দক্ষতা শেখা যায় না – যেমন ক্লাস ম্যানেজমেন্ট বা দীর্ঘমেয়াদী মূল্যায়ন।
- প্রযুক্তি নির্ভরতা – ভিডিও রেকর্ডিং, অডিও ইত্যাদি সব প্রতিষ্ঠানে সহজলভ্য নয়।
- খরচ ও আয়োজন সমস্যা – অনেক সময় ছোট গ্রুপ গঠন ও পর্যবেক্ষণ ব্যয়বহুল হয়ে যায়।
🔮 Micro Teaching এর সম্ভাবনা
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ আধুনিকীকরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
- ডিজিটাল প্রযুক্তি (ভিডিও বিশ্লেষণ, অনলাইন মাইক্রো টিচিং) যুক্ত হলে আরও কার্যকর হবে।
- শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচনে দক্ষতা যাচাইয়ের একটি মানদণ্ড হতে পারে।
- গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নবীন শিক্ষকদের বাস্তব প্রস্তুতি দিতে পারবে।
- গবেষণার নতুন ক্ষেত্র – শেখার কৌশল, শিক্ষক-শিক্ষার্থী যোগাযোগ উন্নত করার সুযোগ।
🚧 Micro Teaching এর সমস্যা
- বাংলাদেশসহ অনেক দেশে পর্যাপ্ত অবকাঠামো (ক্লাসরুম, ভিডিও সুবিধা, প্রশিক্ষক) নেই।
- অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি থাকা অবস্থায় ছোট গ্রুপে অনুশীলন করা কঠিন।
- অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অভাব – Feedback দেওয়ার মতো দক্ষ ট্রেইনার সব জায়গায় নেই।
- অর্থ ও সময়ের সীমাবদ্ধতা – অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদী মাইক্রো টিচিং চালাতে পারে না।
- শিক্ষার্থীর অনীহা – মাইক্রো টিচিংকে অনেক সময় আনুষ্ঠানিক বা কৃত্রিম মনে হয়, ফলে তারা সিরিয়াস হয় না।
